Saturday, August 5, 2017
Friday, August 4, 2017
Tuesday, June 20, 2017
মন ভাল নেই, মহাদেব সাহা
বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায়না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে?
এই শূন্য ঘরে, এই নির্বসনে কতকাল,
আর কতকাল!
আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘর বাড়ি,
উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস-
কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই,
শুধু শূন্যতার এই দীর্ঘশ্বাস, এই দীর্ঘ পদধ্বনি।
টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত
ডাকতে ডাকতে একশেষ;
কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না
এই হিম ঘরে ভাঙা চেয়ারে একা বসে আছি।
একি শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশ্বর,
এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা!
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই
আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো
ভালোবাসতে চাই-
এই কি আমার অপরাধ!
আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক
মন ভালো নেই, মন ভালো নেই;
তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার
কথা ছিলো-
আসা যাওয়ার পথের ধারে
ফুল ফোটানোর কথা ছিলো
সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না
আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত
শুধু হাহাকার
শুধু শূন্যতা, শূন্যতা।
তোমার শূন্য পথের দিকে তাকাতে তাকাতে
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলো,
সব নদীপথ বন্ধ হলো, তোমার সময় হলো না-
আজ সারাদিন বিষাদ পর্ব, সারাদিন তুষারপাত…
মন ভালো নেই,মন ভালো নেই।
Tuesday, June 13, 2017
সুন্দরের গান,হেলাল হাফিজ
হলো না, হলো না।
শৈশব হলো না, কৈশোর হলো না
না দিয়ে যৌবন শুরু, কার যেন
বিনা দোষে শুরুটা হলো না।
হলো না, হলো না।
দিবস হলো না, রজনীও না
সংসার হলো না, সন্ন্যাস হলো না, কার যেন
এসব হলো না, ওসব আরও না।
হলো না, হলো না।
সুন্দুর হলো না, অসুন্দরও না
জীবন হলো না, জীবনেরও না, কার যেন
কিছুই হলো না, কিচ্ছু হলো না।
হলো না। না হোক,
আমি কী এমন লোক!
আমার হলো না তাতে কি হয়েছে?
তোমাদের হোক।
#হেলাল হাফিজ
Saturday, June 10, 2017
তুমি আজ আসবে বলে, শিমুল মুস্তাফা
তুমি আজ আসবে বলে-
বহুক্ষণ আমি অবাক হয়েছি!
ঘরের চৌদিকের দেয়ালের ঝুলগুলো পরিষ্কার
করেছি
আমার ঘরটাকে আমি নিজেই আপন
করে সাজিয়েছি
সেই সারা রাত ধরে!
এটা কদম ফুলের মাস
আমি ভুলিনি, তাই
তোমার প্রত্যাশায় আমি ছিঁড়েছি
এক গোছা কদম ফুল
সুগন্ধি সাবান নিয়ে ছুটে গেছি পুকুর
পাড়ে
আমার এক মাত্র সাদা শার্ট
টাকে ধোবার জন্য
বিশ্বাস কর, শার্টের কলারে ভীষণ
ময়লা ছিল
তবুও আমি ভালো করে ধুইনি,
ছিঁড়ে যাবার ভয়ে?
পরিচ্ছন্নতার ভয়ের চেয়ে, তোমার
প্রতি ভয়টা বেশী বলেই হয়ত!
ধুলো পড়া আয়নার কাছে গিয়েছি বার বার।
হেয়ার ইস্টাইল ঠিক করতে করতে-
নিজের প্রতি ঘেন্না জমিয়েছি
তবুও, আমি কত রাত গুলো কম খেয়ে
পয়সা জমাচ্ছি, শুধু প্রত্যাশায়
তুমি আজ আসবে
নিজের জীবনের চেয়ে-
ভালবাসার মূল্য নাকি অনেক বেশী?
অথচ, অথচ জীবনের জন্যে ভালবাসা
নারীর সৌন্দর্যের চেয়ে- পুরুষের
পৌরস্য অনেক ঊর্ধ্বে
অথচ, আমি আজ ভীষণ অসহায়
তবুও বিশ্বাস কর, হে নারী-
বেঁচে থাকার ইচ্ছা এখন আগের
চেয়ে ঢের বেশী
তোমার চিঠিতে তুমি উল্লেখ করেছ-
শনিবারে তুমি আসছ, তাই
সমস্ত শনিকে কাঁটিয়ে, সেই শনির
অপেক্ষায় ছিলাম
আজকের এই দিনে আমি স্বর্গে যেতেও
রাজি নই
আজ আমি স্বর্গ কে উৎসর্গ করলাম
আজ আমি হৃদপিণ্ডে নাঙল চালানো বন্ধ
করলাম
আমি আমি মুখ দিয়ে চিমনীর মত-
বিষাক্ত ধোঁয়া বের করা বন্ধ করলাম
আজ আমি বন্ধ করলাম,
চরিত্রকে বিক্রি করা
যদি কোনদিন মনে হয়,
আমার হৃদপিণ্ডে দুষিত রক্ত আছে!
যদি কোনদিন মনে হয়,
আমার ফুসফুসে বিষাক্ত ধোঁয়া আছে!
যদি কোনদিন মনে হয়,
আমার চরিত্রে কলঙ্ক আছে!
তবে, তবে সেদিন আমার বিশ্বাসে
তোমার বিষ দাঁত বসিয়ে দিও
আমি সব আসনে থেকে, নির্দ্বিধায়
সেই বিষ-
গ্রহণ করবো, গ্রহণ করবো, গ্রহণ করবো ।
Tuesday, June 6, 2017
এলোমেলো, জুলহাস উদ্দীন
এলোমেলো
জুলহাস উদ্দীন
এখন আমি যখন তখন
যেমন ইচ্ছে বাচতে পারি,
ইচ্ছে হলেই হাসতে পারি, কাঁদতে পারি !
বেতাল সুরে তাল কাটে হায়
আমার গানে যখন তখন,
কবিতাতে,ভীষণ রকম ছন্দ-পতন !
আমার বুকেই চোখের জলের
অবাক করা অথই পানি,
ছলাৎ-ছলাৎ, এপার-ওপার কানাকানি !
আমার আকাশ মেঘলাছটা
কেমন যেন বিষাদ কালো,
নেইতো কোথাও, রৌদ্র আলো !
মনের মাঝের আঙ্গিনাতে
একটু খানি সুখ ফোটা নেই,
একটু খানি দুখ ফোটাও নেই !
সাদা কালো জীবনটাতে
হাজার রঙ্গের ছড়া-ছড়ি,
বড্ড বেশি বাড়া-বাড়ি !
Wednesday, May 17, 2017
কান্না, ( আহসান হাবীব)
কান্না
প্রেম নেই তবু প্রেমের কান্না মরেনি
তুমি নেই তবু তোমাকে পাওয়ার বাসনার সোনা ঝরেনি
এই সর্পিল জীবনের পথে আলগোছে ছুঁয়ে যাওয়া
তুমি যেন কোন চৈত্র রাতের দূর সমুদ্র হাওয়া!
তুমি নেই তবু একটি বিপুল বিস্ময় আছে মনে-
হঠাৎ কখনো পাখি ডেকে যায় বনে,
হঠাৎ কখনো বাতার পাশে হেনার গন্ধ জাগে;
হঠাৎ কখনো দুঃস্বহ অনুরাগে
একটি ব্যকুল গান রেখে যাও সেখানে
আমার গানের শ্রান্ত পাখিরা নীড় খুঁজে ফেরে যেখানে।
কোনো কোনো দিন বৈশাখী মেঘ, দোলা দিয়ে যাও তুমি,
কেঁপে ওঠে ঘন অমাবশ্যায় নির্জন বনভূমি।
সাড়া দাও তুমি গহন অন্ধকারে,
চেনা পৃথিবীর দিগন্ত রেখা ঘুঁচে যায় বারেবারে।
জাগে শুধু সেই অন্ধকারের গহনে
কুঁড়ির গন্ধ অন্ধ আবেগে অনাদি কালের দহনে।
তোমার পাখার সুর জেগে ওঠে রূপালি নদীর তীরে
আমার পায়ের চিহ্ন তখন রাতের পাহাড় ঘিরে,
ছুঁয়ে যেতে চায় তোমার আকাশ আলগোছে ভালবেসে।
হঠাৎ কখনো পথ ঢেলে দাও তোমার কৃষ্ণ কেশে!
যারে পেতে চাই নিজের ছায়ায় ঢাকা সে
বৈশাখী মেঘ তবু রেখে যায় ঝড়ের ইশারা আকাশে।
সেই বৈশাখী মেঘের আবেগে আষাঢ়ের আঙিনাতে
যদি কোনদিন বন্যা নামায় এমনি ঝড়ের রাতে-
এই আশা নিয়ে প্রেমের কান্না জাগে,
দিনের পৃথিবী ঘুমালে তখন স্বপ্নের দোলা লাগে।
#আহসান হাবীব
Tuesday, May 16, 2017
মনে থাকবে
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্ত বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু'জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের
জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক'রে দু'চোখ ভ'রে থাকবো
চেয়ে...
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে
যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে
দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে,
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো...
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গায়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ'রে তোমার হীরকচূর্ণ
ভালোবাসা।
তোমার জলধারা আমার অহংকারকে
ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই মিলিয়ে নিও!
#অরন্যক বসু
Sunday, May 14, 2017
অাকাঙ্খা, (আবুল হাসান)
তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।
তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।
তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।
তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।
আবুল হাসান
Saturday, April 22, 2017
Sunday, April 2, 2017
নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুল
নিরাশ্রয় পাচঁটি আঙুল তুমি
নির্দ্বিধায় অলংকার করে নাও ,
এ আঙুল ছলনা জানে না।
একবার তোমার নোলক ,
দুল , হাতের চুড়ি কটিদেশে বিছা করে
অলংকৃত হতে দিলে বুঝবে হেলেন ,
এ আঙুল সহজে বাজে না।
একদিন একটি বেহালা নিজেকে বাজাবে বলে
আমার আঙুলে এসে দেখেছিলো
তার বিষাদের চেয়ে বিশাল বিস্তৃতি ,
আমি তাকে চলে যেতে বলিনি তবুও
ফিরে গিয়েছিলো সেই বেহালা সলাজে।
অসহায় একটি অঙ্গুরী
কনিষ্ঠা আঙুলে এসেই বলেছিলো ঘর,
অবশেষে সেও গেছে সভয়ে সলাজে।
ওরা যাক , ওরা তো যাবেই
ওদের আর দুঃখ কতোটুকু? ওরা কি মানুষ ?
হেলাল হাফিজ
Thursday, March 30, 2017
Wednesday, March 15, 2017
অামি ছাড়া অনেককেইতো অনেক দিলে ( পুর্ণেন্দু পুত্রী)
আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে
এর আকাশে ওর আকাশে
ওষ্ঠপুটের অনেক পাখি উড়িয়ে দিলে
পায়রাকে ধান খুটিতে দিলে খোয়াই জুড়ে
বুকের দুটো পর্দাঢাকা জানলা খুলে
কতজনকে হাত-ডোবানো বৃষ্টি দিলে
কত মুখের রোদের রেখা মুছিয়ে দিলে নীল রুমালে
আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে,
চায়ের কাপে মিষ্টি দিলে হাসির থেকে
নকশাকাটা কাঁচের গ্লাসে সরবতে সুখ মিশিয়ে দিলে
নখের আঁচড় কাটতে দিলে ডালিমবনে
দাঁতের ফাঁকে লাল সুপুরি ভাঙ্গতে দিলে
আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে।
একটা জিনিস দাওনি কেবল কাউকে তুমি
আলমারিটার ঝুলন চাবি,
শূন্যতাকে রঙীন করার সাম্পু সাবান
সায়া শাড়ীর ভাঁজের নিচে,
একটা ছোটো কৌটো আছে,
তার ভিতরে ভোমরা থাকে,
সে ভোমরাটি সকল জানে,
কোন্ হাসিতে রক্ত ঝরে ঠিক অবিকল হাসির মতো,
সে ভোমরাটি সকল জানে,
কোন রুমালে কান্না এবং কোন আঁচলে বুকের ক্ষত।
দেয়ালজুড়ে বিকট ছায়া ভাবছো বুঝি অন্য কারো?
কার ছায়াটি কিরূপ গাঢ় সে ভোমরাটি সকল জানে।
আমায় কিছু লিখতে হবে
লিখতে গেলে ভোমরাটি চাই।
তোমার ঘরের আলমারিটার ঝুলন-চাবি
আমায় দেবে?
Sunday, March 12, 2017
আহ্বান (জুলহাস উদ্দীন)
মর্জী,তুমি শুধু মর্জি করেই গেলে
আমার ভালোবাসার পাত্রটা ছুয়েও দেখলেনা,
অপাত্রে করেছো দান তোমার প্রেমের পাত্র,
পান করে সে মধুকর তোমায় করেছে নিঃশ্ব,
আজ তুমি সুরাবিহীণ।
অথচ আমি কানায় কানায় ভরা প্রেমের নদী,
ভুল করেও ডুব সাঁতার দিলেনা কখোনো,
অবুজ বালিকার মত অবহেলায় চলে গেলে,
ফিরেও দেখলে না কতটা কাঙ্গাল আমি।
যা গিয়েছে চলে কখোনোই কি ছিলো তা তোমার?
তার জন্য বৃথা কেনো অপেক্ষা?
এর চেয়ে এই ভাল যা রয়েছে আজো,
তার মাঝেই না হয় তোমাকে খোজো!
12/09/15
Wednesday, March 8, 2017
ইচ্ছের দরোজায়,( রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)
সব কথা হয়ে গেলে শেষ
শব্দের প্লাবনে একা জেগে রবো নির্জন ঢেউ,
ভেসে ভেসে জড়াবো নিজেকে ।
শরীরের সকল নগ্নতায় আমি খেলা কোরে যাবো,
তীর ভেবে ভেঙে পড়বো আমার যৌবনে ।
কথা কি শেষ হয়ে যায়- সব কথা?
নাকি বুকের ভেতরে সব অসমাপ্ত ইচ্ছের মতো
দ্বিধাগ্রস্হ জেগে থাকে বুকে নিয়ে বিনিদ্র রাত,
জেগে জেগে নিজেকে দ্যাখে ভীষন উত্সাহে?
সব কথা শেষ হলে দরোজায় করাঘাত রেখে যাবো,
উত্কন্ঠার ধ্বনিরা বিলীন হবে ইথারের স্বাস্হ্যে-
দ্যাখা হবে না ।
শিথানের জানালা খুলে রেখে যাবো একটি চোখ,
শিশির চুমু খাবে চোখের উত্তাপে- চুমু খাবে ।
জানালায় রেখে যাবো একটা বিনিদ্র চোখ,
যে-চোখ আকাশ দ্যাখে, মানুষের স্বভাব দ্যাখে,
যে-চোখ স্বাতির মগ্নতা দেখে প্রেমার্দ্র বুকে
অনুভব জ্বেলে রাখে অশেষ বাসনা ।
সব কথা শেষ হলে ফিরে যাবো,
একটি চোখ রেখে যাবো শিথানের জানালায় ।
সব কথা শেষ হলে করাঘাত জাগাবে তোমায়,
তুমি এসে খুলবে দুয়োর- দ্যাখা হবে না ।।
Tuesday, March 7, 2017
কথোপকথন ৫ - পূর্ণেন্দু পুত্রী
কথোপকথন ৫ – পূর্ণেন্দু পুত্রী
আমি তোমার পান্থপাদপ
তুমি আমার অতিথশালা ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
-দরজাটা কই, মস্ত তালা ?
তুমি আমার সমুদ্রতীর
আমি তোমার উড়ন্ত চুল ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
-সমস্ত ভুল , সমস্ত ভুল ?
আমি তোমার হস্তরেখা
তুমি আমার ভর্তি মুঠো ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
-কোথায় যাবি, নৌকো ফুটো ?
পদ্মপাতার জল
তোমায় আমি – জীবনানন্দ দাশ
তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।
তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।
Sunday, March 5, 2017
আমাকে ভালবাসার পর
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই
আগের মত থাকবে না তোমার,
যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই
আগের মতো নেই
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।
যে কলিংবেল বাজে নি তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে
এবং থরথর ক’রে উঠবে দরোজাজানালা
আর তোমার হৃৎপিন্ড।
পরমুহূর্তেই তোমার ঝনঝন-ক’রে ওঠা এলোমেলো রক্ত ঠান্ডা হ’য়ে যাবে
যেমন একাত্তরে দরোজায় বুটের অদ্ভুদ শব্দে
নিথর স্তব্ধ হ’য়ে যেত ঢাকা শহরের জনগণ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই
আগের মত থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায় ছুটে আসছি আমি
আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি
এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্ত
আর কালো চশমায় এত অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।
আমাকে ভালবাসার পর তুমি ভুলে যাবে বাস্তব আর অবাস্তব, বস্তু আর স্বপ্নের পার্থক্য।
সিঁড়ি ভেবে পা রাখবে স্বপ্নের চূড়োতে,
ঘাস ভেবে দু-পা ছড়িয়ে বসবে অবাস্তবে,
লাল টুকটুকে ফুল ভেবে খোঁপায় গুঁজবে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন।
না-খোলা শাওয়ারের নিচে বারোই ডিসেম্বর থেকে তুমি অনন্তকাল দাঁড়িয়ে
থাকবে এই ভেবে যে তোমার চুলে ত্বকে ওষ্ঠে গ্রীবায় অজস্র ধারায়
ঝরছে বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল।
তোমার যে ঠোঁটে চুমো খেয়েছিলো
উদ্যম পরায়ণ এক প্রাক্তন প্রেমিক,
আমাকে ভালবাসার পর সেই নষ্ট ঠোঁট খঁসে প’ড়ে
সেখানে ফুটবে এক অনিন্দ্য গোলাপ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।
নিজেকে দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী
শুয়ে আছো হাসপাতালে। পরমুহূর্তেই মনে হবে
মানুষের ইতিহাসে একমাত্র তুমিই সুস্থ, অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।
শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙে
তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে
ধরবে আমার হাত, তখন তোমার মনে হবে
এ-শহর আর বিংশ শতাব্দীর
জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা-ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম-
পবিত্র অজর।
Tuesday, February 28, 2017
Sunday, February 26, 2017
Wednesday, February 22, 2017
Saturday, February 18, 2017
Wednesday, February 15, 2017
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
যার কেন ঘর হয় না, উঠোন হয় না।
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
শহর ভর্তি মানুষ, অথচ
ভালোবাসর একজন মানুষ জোটে না।
কেউ কেউ কি এমন থাকে না
সারা জীবন পাখি এবং আকাশ দেখতে দেখতে
মানুষ এবং অরণ্য দেখতে দেখতে
সমুদ্র এবং শূণ্যতা দেখতে দেখতে বয়স বাড়ে!
আর বয়স বাড়তে বাড়তে এমনও কি হয় না
যে ধ্বসে যাবার আগ মুহুর্তে
আর একটি জীবন চায় - জীবন - যাপনের?
হয় না এমন তো নয়, হয়।
( তসলিমা নাসরীন )
Monday, February 13, 2017
কারো কারো জন্য এমন লাগে কেন!
কারো কারো জন্য এমন লাগে কেন!
- তসলিমা নাসরিন-
জানি না কেন হঠাৎ কোনও কারণ নেই,
কিছু নেই, কারও কারও জন্য খুব
অন্যরকম লাগে অন্য রকম লাগে,
কোনও কারণ নেই, তারপরও বুকের মধ্যে চিনচিনে কষ্ট হতে থাকে,
কারুকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয়, পেতে ইচ্ছে হয়, কারুর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে ইচ্ছে হয়,
সারাজীবন ধরে সারাজীবনের গল্প করতে ইচ্ছে
হয়,
ইচ্ছে হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারপরও ইচ্ছে হয়।
ইচ্ছের কোনও লাগাম থাকে না।
ইচ্ছেগুলো এক সকাল থেকে আরেক সকাল পর্যন্ত জ্বালাতে থাকে। প্রতিদিন।
ইচ্ছেগুলো পুরণ হয় না, তারপরও ইচ্ছেগুলো বেশরমের মত পড়ে থাকে,আশায় আশায় থাকে।
কষ্ট হতে থাকে, কষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারপরও হতে থাকে,সময়গুলো নষ্ট হতে থাকে।
কারও কারও জন্য জানি না জীবনের শেষ বয়সে এসেও সেই কিশোরীর মত কেন অনুভব করি।
কিশোরী বয়সেও যেমন লুকিয়ে রাখতে হত ইচ্ছেগুলো, এখনও হয়।
কি জানি সে, যার জন্য অন্যরকমটি লাগে,
যদি ইচ্ছেগুলো দেখে হাসে!
সেই ভয়ে লুকিয়ে রাখি ইচ্ছে, সেই ভয়ে আড়াল করে রাখি কষ্ট।
হেঁটে যাই, যেন কিছুই হয়নি, যেন আর সবার মত সুখী মানুষ আমিও, হেঁটে যাই।
যাই, কত কোথাও যাই, কিন্তু তার কাছেই কেবল যাই না, যার জন্য লাগে।
কারও কারও জন্য এমন অদ্ভুত অসময়ে বুক ছিঁড়ে যেতে থাকে কেন!
জীবনের কত কাজ বাকি, কত তাড়া!
তারপরও সব কিছু সরিয়ে রেখে তাকে ভাবি, তাকে না পেয়ে কষ্ট আমাকে কেটে কেটে
টুকরো করবে জেনেও তাকে ভাবি।
তাকে ভেবে কোনও লাভ নেই জেনেও ভাবি।
তাকে কোনওদিন পাবো না জেনেও তাকে পেতে চাই।
Sunday, February 12, 2017
তাহারেই মনে পড়ে
“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের
মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর
আকুল?”
“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি
সন্ধান।”
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর
রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য
বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি
ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না
কোন মতে।”
"বেগম সুফিয়া কামাল"
বসন্ত বন্দনা
বসন্ত বন্দনা
নির্মলেন্দু গুণ
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,—দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরন,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কি আনন্দ জাগানিয়া।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতই ফেরাই চোখ,
যতই এড়াতে চাই তাকে, দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্যখানি
নবীন পল্লবে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরূপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।
Saturday, February 11, 2017
Friday, February 10, 2017
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
পরিপূর্ণ পাল্টে দাও আমার জীবন,
আমি ফের বর্ণমালা থেকে শুরু করি-
আবার মুখস্ত করি ডাক-নামতা,
আবার সাঁতার শিখি একহাঁটু জলে;
তুমি এই অপগণ্ড বয়স্ক শিশুকে
মেরেপিটে কিছুটা মানুষ করো,
খেতে দাও আলুসিদ্ধ দুটি ফেনা ভাত।
আবার সবুজ মাঠে একা ছেড়ে দাও তাকে,
একটু করিয়ে দাও পরিচয় আকাশের সাথে
খুব যত্ন করে সব বৃক্ষ ও ফুলের নাম শিখি।
আমূল বদলে দাও পুরনো জীবন,
ভালোবেসে আবার নদীর তীরে
নরম মাটিতে শুরু করি চলা
বানাই একটি ছোটো বাংলো খড়ের কুঁড়েঘর;
পুরোপুরি পাল্টে দাও আমার জীবন,
আমি ফের গোড়া থেকে শুরু করি-একেবারে পরিশুদ্ধ মানুষের মতো করি আরম্ভ জীবন;
এভাবে কখনো আর করবো না ভুলভ্রানি- কিছু
এবার নদীর জলে ধুয়ে নেই এই পরাজিত মুখ,
ধুয়ে নেই সকলের অপমান্ত উপেক্ষার কালি।
একবার ভালোবেসে, মাতৃস্নেহে
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
দেখো কীভাবে শুধরে নেই জীবনের ভুলচুকগুলি।
মহাদেব সাহা