Tuesday, February 28, 2017
Sunday, February 26, 2017
Wednesday, February 22, 2017
Saturday, February 18, 2017
Wednesday, February 15, 2017
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
যার কেন ঘর হয় না, উঠোন হয় না।
কেউ কেউ তো থাকেই এমন
শহর ভর্তি মানুষ, অথচ
ভালোবাসর একজন মানুষ জোটে না।
কেউ কেউ কি এমন থাকে না
সারা জীবন পাখি এবং আকাশ দেখতে দেখতে
মানুষ এবং অরণ্য দেখতে দেখতে
সমুদ্র এবং শূণ্যতা দেখতে দেখতে বয়স বাড়ে!
আর বয়স বাড়তে বাড়তে এমনও কি হয় না
যে ধ্বসে যাবার আগ মুহুর্তে
আর একটি জীবন চায় - জীবন - যাপনের?
হয় না এমন তো নয়, হয়।
( তসলিমা নাসরীন )
Monday, February 13, 2017
কারো কারো জন্য এমন লাগে কেন!
কারো কারো জন্য এমন লাগে কেন!
- তসলিমা নাসরিন-
জানি না কেন হঠাৎ কোনও কারণ নেই,
কিছু নেই, কারও কারও জন্য খুব
অন্যরকম লাগে অন্য রকম লাগে,
কোনও কারণ নেই, তারপরও বুকের মধ্যে চিনচিনে কষ্ট হতে থাকে,
কারুকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয়, পেতে ইচ্ছে হয়, কারুর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে ইচ্ছে হয়,
সারাজীবন ধরে সারাজীবনের গল্প করতে ইচ্ছে
হয়,
ইচ্ছে হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারপরও ইচ্ছে হয়।
ইচ্ছের কোনও লাগাম থাকে না।
ইচ্ছেগুলো এক সকাল থেকে আরেক সকাল পর্যন্ত জ্বালাতে থাকে। প্রতিদিন।
ইচ্ছেগুলো পুরণ হয় না, তারপরও ইচ্ছেগুলো বেশরমের মত পড়ে থাকে,আশায় আশায় থাকে।
কষ্ট হতে থাকে, কষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারপরও হতে থাকে,সময়গুলো নষ্ট হতে থাকে।
কারও কারও জন্য জানি না জীবনের শেষ বয়সে এসেও সেই কিশোরীর মত কেন অনুভব করি।
কিশোরী বয়সেও যেমন লুকিয়ে রাখতে হত ইচ্ছেগুলো, এখনও হয়।
কি জানি সে, যার জন্য অন্যরকমটি লাগে,
যদি ইচ্ছেগুলো দেখে হাসে!
সেই ভয়ে লুকিয়ে রাখি ইচ্ছে, সেই ভয়ে আড়াল করে রাখি কষ্ট।
হেঁটে যাই, যেন কিছুই হয়নি, যেন আর সবার মত সুখী মানুষ আমিও, হেঁটে যাই।
যাই, কত কোথাও যাই, কিন্তু তার কাছেই কেবল যাই না, যার জন্য লাগে।
কারও কারও জন্য এমন অদ্ভুত অসময়ে বুক ছিঁড়ে যেতে থাকে কেন!
জীবনের কত কাজ বাকি, কত তাড়া!
তারপরও সব কিছু সরিয়ে রেখে তাকে ভাবি, তাকে না পেয়ে কষ্ট আমাকে কেটে কেটে
টুকরো করবে জেনেও তাকে ভাবি।
তাকে ভেবে কোনও লাভ নেই জেনেও ভাবি।
তাকে কোনওদিন পাবো না জেনেও তাকে পেতে চাই।
Sunday, February 12, 2017
তাহারেই মনে পড়ে
“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের
মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর
আকুল?”
“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি
সন্ধান।”
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর
রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য
বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি
ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না
কোন মতে।”
"বেগম সুফিয়া কামাল"
বসন্ত বন্দনা
বসন্ত বন্দনা
নির্মলেন্দু গুণ
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,—দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরন,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কি আনন্দ জাগানিয়া।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতই ফেরাই চোখ,
যতই এড়াতে চাই তাকে, দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্যখানি
নবীন পল্লবে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরূপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।
Saturday, February 11, 2017
Friday, February 10, 2017
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
পরিপূর্ণ পাল্টে দাও আমার জীবন,
আমি ফের বর্ণমালা থেকে শুরু করি-
আবার মুখস্ত করি ডাক-নামতা,
আবার সাঁতার শিখি একহাঁটু জলে;
তুমি এই অপগণ্ড বয়স্ক শিশুকে
মেরেপিটে কিছুটা মানুষ করো,
খেতে দাও আলুসিদ্ধ দুটি ফেনা ভাত।
আবার সবুজ মাঠে একা ছেড়ে দাও তাকে,
একটু করিয়ে দাও পরিচয় আকাশের সাথে
খুব যত্ন করে সব বৃক্ষ ও ফুলের নাম শিখি।
আমূল বদলে দাও পুরনো জীবন,
ভালোবেসে আবার নদীর তীরে
নরম মাটিতে শুরু করি চলা
বানাই একটি ছোটো বাংলো খড়ের কুঁড়েঘর;
পুরোপুরি পাল্টে দাও আমার জীবন,
আমি ফের গোড়া থেকে শুরু করি-একেবারে পরিশুদ্ধ মানুষের মতো করি আরম্ভ জীবন;
এভাবে কখনো আর করবো না ভুলভ্রানি- কিছু
এবার নদীর জলে ধুয়ে নেই এই পরাজিত মুখ,
ধুয়ে নেই সকলের অপমান্ত উপেক্ষার কালি।
একবার ভালোবেসে, মাতৃস্নেহে
আমূল বদলে দাও আমার জীবন
দেখো কীভাবে শুধরে নেই জীবনের ভুলচুকগুলি।
মহাদেব সাহা
Tuesday, February 7, 2017
আমার কুঁড়েঘরে
আমার কুঁড়েঘরে
(হুমায়ুন আজাদ)
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে
বরফ প’ড়ে আছে গভীর ঘন হয়ে
পাশের নদী ভ’রে বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে
বরফ প’ড়ে আছে গভীর ঘন হয়ে
পাশের নদী ভ’রে বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক।
Sunday, February 5, 2017
ভুমিহীন কৃষকের গান
দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।
মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!
ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।
একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।
হেলাল হাফিজ
১২.১১.৮১
Saturday, February 4, 2017
কথোপকথন-৩
কথোপকথন – ৩ -পূর্ণেন্দু পত্রী
তোমার বন্ধু কে ? দীর্ঘশ্বাস ?
আমার ও তাই ।
আমার শূন্যতা গননাহীন ।
তোমার ও তাই ?
দুরের পথ দিয়ে ঋতুরা যায়
ডাকলে দরোজায় আসে না কেউ ।
অযথা বাশি শুনে বাইরে যাই
বাতাসে হাসাহাসি বিদ্রুপের ।
তোমার সাজি ছিল, বাগান নেই
আমার ও তাই ।
আমার নদী ছিল, নৌকা নেই
তোমার ও তাই ?
তোমার বিছানায় বৃষ্টিপাত
আমার ঘরদোরে ধুলার ঝড় ।
তোমার ঘরদোরে আমার মেঘ
আমার বিছানায় তোমার হিম ।