Wednesday, March 15, 2017

অামি ছাড়া অনেককেইতো অনেক দিলে ( পুর্ণেন্দু পুত্রী)

আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে
এর আকাশে ওর আকাশে
ওষ্ঠপুটের অনেক পাখি উড়িয়ে দিলে
পায়রাকে ধান খুটিতে দিলে খোয়াই জুড়ে
বুকের দুটো পর্দাঢাকা জানলা খুলে
কতজনকে হাত-ডোবানো বৃষ্টি দিলে
কত মুখের রোদের রেখা মুছিয়ে দিলে নীল রুমালে

আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে,

চায়ের কাপে মিষ্টি দিলে হাসির থেকে
নকশাকাটা কাঁচের গ্লাসে সরবতে সুখ মিশিয়ে দিলে
নখের আঁচড় কাটতে দিলে ডালিমবনে
দাঁতের ফাঁকে লাল সুপুরি ভাঙ্গতে দিলে

আমি ছাড়া অনেককেই তো অনেক দিলে।

একটা জিনিস দাওনি কেবল কাউকে তুমি
আলমারিটার ঝুলন চাবি,
শূন্যতাকে রঙীন করার সাম্পু সাবান
সায়া শাড়ীর ভাঁজের নিচে,
একটা ছোটো কৌটো আছে,
তার ভিতরে ভোমরা থাকে,
সে ভোমরাটি সকল জানে,
কোন্ হাসিতে রক্ত ঝরে ঠিক অবিকল হাসির মতো,
সে ভোমরাটি সকল জানে,
কোন রুমালে কান্না এবং কোন আঁচলে বুকের ক্ষত।

দেয়ালজুড়ে বিকট ছায়া ভাবছো বুঝি অন্য কারো?
কার ছায়াটি কিরূপ গাঢ় সে ভোমরাটি সকল জানে।

আমায় কিছু লিখতে হবে
লিখতে গেলে ভোমরাটি চাই।
তোমার ঘরের আলমারিটার ঝুলন-চাবি
আমায় দেবে?

Sunday, March 12, 2017

আহ্বান (জুলহাস উদ্দীন)

মর্জী,তুমি শুধু মর্জি করেই গেলে
আমার ভালোবাসার পাত্রটা ছুয়েও দেখলেনা,
অপাত্রে করেছো দান তোমার প্রেমের পাত্র,
পান করে সে মধুকর তোমায় করেছে নিঃশ্ব,
আজ তুমি সুরাবিহীণ।

অথচ আমি কানায় কানায় ভরা প্রেমের নদী,
ভুল করেও ডুব সাঁতার দিলেনা কখোনো,
অবুজ বালিকার মত অবহেলায় চলে গেলে,
ফিরেও দেখলে না কতটা কাঙ্গাল আমি।

যা গিয়েছে চলে কখোনোই কি ছিলো তা তোমার?
তার জন্য বৃথা কেনো অপেক্ষা?
এর চেয়ে এই ভাল যা রয়েছে আজো,
তার মাঝেই না হয় তোমাকে খোজো!

12/09/15

Wednesday, March 8, 2017

ইচ্ছের দরোজায়,( রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)

সব কথা হয়ে গেলে শেষ
শব্দের প্লাবনে একা জেগে রবো নির্জন ঢেউ,
ভেসে ভেসে জড়াবো নিজেকে ।
শরীরের সকল নগ্নতায় আমি খেলা কোরে যাবো,
তীর ভেবে ভেঙে পড়বো আমার যৌবনে ।

কথা কি শেষ হয়ে যায়- সব কথা?
নাকি বুকের ভেতরে সব অসমাপ্ত ইচ্ছের মতো
দ্বিধাগ্রস্হ জেগে থাকে বুকে নিয়ে বিনিদ্র রাত,
জেগে জেগে নিজেকে দ্যাখে ভীষন উত্‍সাহে?

সব কথা শেষ হলে দরোজায় করাঘাত রেখে যাবো,
উত্‍কন্ঠার ধ্বনিরা বিলীন হবে ইথারের স্বাস্হ্যে-
দ্যাখা হবে না ।

শিথানের জানালা খুলে রেখে যাবো একটি চোখ,
শিশির চুমু খাবে চোখের উত্তাপে- চুমু খাবে ।
জানালায় রেখে যাবো একটা বিনিদ্র চোখ,
যে-চোখ আকাশ দ্যাখে, মানুষের স্বভাব দ্যাখে,
যে-চোখ স্বাতির মগ্নতা দেখে প্রেমার্দ্র বুকে
অনুভব জ্বেলে রাখে অশেষ বাসনা ।

সব কথা শেষ হলে ফিরে যাবো,
একটি চোখ রেখে যাবো শিথানের জানালায় ।
সব কথা শেষ হলে করাঘাত জাগাবে তোমায়,
তুমি এসে খুলবে দুয়োর- দ্যাখা হবে না ।।

Tuesday, March 7, 2017

কথোপকথন ৫ - পূর্ণেন্দু পুত্রী

কথোপকথন ৫ – পূর্ণেন্দু পুত্রী

আমি তোমার পান্থপাদপ
তুমি আমার অতিথশালা ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো

-দরজাটা কই, মস্ত তালা ?

তুমি আমার সমুদ্রতীর
আমি তোমার উড়ন্ত চুল ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো

-সমস্ত ভুল , সমস্ত ভুল ?

আমি তোমার হস্তরেখা
তুমি আমার ভর্তি মুঠো ।
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো

-কোথায় যাবি, নৌকো ফুটো ?

পদ্মপাতার জল

তোমায় আমি – জীবনানন্দ দাশ 

তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে 
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে; 
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে 
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে 
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে। 

নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে 
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে 
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর 
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার 
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে। 

তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই 
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই, 
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে 
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে 
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে। 

জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয় 
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়। 
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল; 
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল 
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে। 

Sunday, March 5, 2017

আমাকে ভালবাসার পর

আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই
আগের মত থাকবে না তোমার,
যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই
আগের মতো নেই
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।

যে কলিংবেল বাজে নি তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে
এবং থরথর ক’রে উঠবে দরোজাজানালা
আর তোমার হৃৎপিন্ড।

পরমুহূর্তেই তোমার ঝনঝন-ক’রে ওঠা এলোমেলো রক্ত ঠান্ডা হ’য়ে যাবে
যেমন একাত্তরে দরোজায় বুটের অদ্ভুদ শব্দে
নিথর স্তব্ধ হ’য়ে যেত ঢাকা শহরের জনগণ।

আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই
আগের মত থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায় ছুটে আসছি আমি
আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি
এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্ত
আর কালো চশমায় এত অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।

আমাকে ভালবাসার পর তুমি ভুলে যাবে বাস্তব আর অবাস্তব, বস্তু আর স্বপ্নের পার্থক্য।
সিঁড়ি ভেবে পা রাখবে স্বপ্নের চূড়োতে,
ঘাস ভেবে দু-পা ছড়িয়ে বসবে অবাস্তবে,
লাল টুকটুকে ফুল ভেবে খোঁপায় গুঁজবে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন।

না-খোলা শাওয়ারের নিচে বারোই ডিসেম্বর থেকে তুমি অনন্তকাল দাঁড়িয়ে
থাকবে এই ভেবে যে তোমার চুলে ত্বকে ওষ্ঠে গ্রীবায় অজস্র ধারায়
ঝরছে বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল।

তোমার যে ঠোঁটে চুমো খেয়েছিলো
উদ্যম পরায়ণ এক প্রাক্তন প্রেমিক,
আমাকে ভালবাসার পর সেই নষ্ট ঠোঁট খঁসে প’ড়ে
সেখানে ফুটবে এক অনিন্দ্য গোলাপ।

আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।
নিজেকে দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী
শুয়ে আছো হাসপাতালে। পরমুহূর্তেই মনে হবে
মানুষের ইতিহাসে একমাত্র তুমিই সুস্থ, অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।

শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙে
তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে
ধরবে আমার হাত, তখন তোমার মনে হবে
এ-শহর আর বিংশ শতাব্দীর
জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা-ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম-
পবিত্র অজর।