Monday, January 30, 2017

একা..

একা...
জুলহাস উদ্দীন

প্রতিটা মানুষের একটা নিজস্ব
দুঃখ থাকে, বুকের ভেতর লুকানো
একটা গোপন দুঃখ।

দু'চোখের কোণায় জমা থাকে
কিছু চাপা কান্নার ঢেউ
যা কখোনো দেখা যায় না।

তারপর একদিন..একান্ত দুঃখটাও
আর আপন থাকেনা
ম্লান হয়ে যায় শোকের অন্তরালে।

চাপা কান্নাগুলো ঝড়তে ঝড়তে
শ্যাওলার মত ভাসতে থাকে
কষ্টের নীল স্রোতে,চলে যায় দূরে।

আসলে এভাবেই একদিন
সবাই চলে যায়,চলে যেতে হয়
ফিরে আসা হয়ে ওঠেনা কখোনো।

শুধু একটা মানুষ অবিরাম ক্ষয়ে যায়
হৃদয়ের খুব গভীরে
একা....বড় বেশী একা...।

Sunday, January 29, 2017

কেউ কি এখন

কেউ কি এখন
— শামসুর রাহমান
কেউ কি এখন এই অবেলায়
আমার প্রতি বাড়িয়ে দেবে হাত?
আমার স্মৃতির ঝোপেঝাড়ে
হরিণ কাঁদে অন্ধকারে
এখন আমার বুকের ভেতর
শুকনো পাতা, বিষের মতো রাত ।
দ্বিধান্বিত দাঁড়িয়ে আছি
একটি সাঁকোর কাছাকাছি,
চোখ ফেরাতেই দেখি সাঁকো
এক নিমিষে ভাঙলো আকস্মাত্‍ ।
গৃহে প্রবেশ করবো সুখে?
চৌকাঠে যায় কপাল ঠুকে ।
বাইরে থাকি নত মুখে
নেকড়েগুলো দেখায় তীক্ষ্ন দাঁত ।
অপরাহ্নে ভালোবাসা
চক্ষে নিয়ে গহন ভাষা
গান শোনালো সর্বনাশা,
এই কি তবে মোহন অপঘাত?
কেউ কি এখন এই অবেলায়
আমার প্রতি বাড়িয়ে দেবে হাত?

পাহাড় চূড়ায়

পাহাড় চূড়ায়
– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
… কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
… যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই
কিনতাম।
কারণ, আমি ঠকতে চাই।

নদীটাও অবশ্য কিনেছিলামি একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো,
ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল আমার বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার
কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু
একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড়
একটা নদী পেয়েছিস?
খুব জিতেছিস তো মাইরি!
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ
সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি,
সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না,
সে জানতো! সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।

এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সেই পাহাড়ের পায়ের
কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ
কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার
খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কন্ঠস্বর সেখানে কেউ
শুনতে পাবে না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,
প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-
এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো....

Wednesday, January 25, 2017

অবেলার শঙ্খধ্বনি

অবেলায় শঙ্খধ্বনি –
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ

অতোটা হৃদয় প্রয়োজন নেই,
কিছুটা শরীর কিছুটা মাংস মাধবীও চাই।
এতোটা গ্রহণ এতো প্রশংসা প্রয়োজন নেই
কিছুটা আঘাত অবহেলা চাই প্রত্যাখান।
সাহস আমাকে প্ররোচনা দেয়
জীবন কিছুটা যাতনা শেখায়,
ক্ষুধা ও খরার এই অবেলায়
অতোটা ফুলের প্রয়োজন নেই।

বুকে ঘৃণা নিয়ে নীলিমার কথা
অনাহারে ভোগা মানুষের ব্যথা
প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই-
করুণাকাতর বিনীত বাহুরা ফিরে যাও ঘরে।

নষ্ট যুবক ভ্রষ্ট আঁধারে কাঁদো কিছুদিন
কিছুদিন বিষে দহনে দ্বিধায় নিজেকে পোড়াও
না হলে মাটির মমতা তোমাতে হবে না সুঠাম,
না হলে আঁধার আরো কিছুদিন ভাসাবে তোমাকে।

অতোটা প্রেমের প্রয়োজন নেই
ভাষাহীন মুখ নিরীহ জীবন
প্রয়োজন নেই- প্রয়োজন নেই

কিছুটা হিংস্র বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।

#pc: collection

Tuesday, January 24, 2017

bengali poetry recitation - bangla kobita abritti | toamr chok eto lal k...

মানুষ || bengali poetry recitation - bangla kobita abritti Video || Nirm...

ওটা কিছু নয় || bangla kobita abritti video album# recitation

bengali poetry recitation - bangla kobita abritti Video | sei golpota | ...

কবিতা আবৃত্তি || kobita abritti || প্রস্থান || Helal Hafiz

বৃষ্টি কন্যার জন্য কবিতা

বৃষ্টিকন্যার জন্য কবিতা
মাসুদুর রহমান

ক.
হেসে খেলে দিন যাচ্ছে ভালই তবু তোমাকে চাই
তোমায় ভেবে সন্ধ্যা দুপুর রাতের ঘুম হারাই
হেসে খেলে দিন যাচ্ছে ভালই আকাশ মেঘে ঢাকা
গুড় গুড় গুড় বৃষ্টি তবু হৃদয় থাকে ফাঁকা
খ.
মেঘ নেই তবু মেঘলা তোমার দারুন মুখ
জল নেই তবু জলাধার তোমার নিটোল চোখ
গ.
উড়নচন্ডী কোন প্রজাপতি
যদি তোকে বলে
আয় উড়ে বেড়াই দুজন
তুই কি করবি তখন
ঘ.
তুই দুধসাদা বক
আমি দিঘীর কালো জল
ছুঁয়ে জংলা কাশের বন
তুই উড়িস অনর্গল
ঙ.
মেঘের দেশে ভেসে বেড়াও মেয়ে
বৃষ্টি হয়ে ঝরছি দেখো তোমার পথ চেয়ে
চ.
খুব সহজেই চলে যাও আবার আসো ফিরে
খুব সহজেই হৃদয় জুড়া ক্ষণেই ঠেলো দূরে
ছ.
ভালবাসার দিন বৃষ্টি হচ্ছিল চুম্বনে
কষ্টতেও বৃষ্টি ছিল ক্রন্দনে
আজ আবার বৃষ্টি হচ্ছে
জ.
জানালা জুড়ে আকাশ যদিও কালো
তুমি আছো তাই মন ভালো
ঝ.
তুমি শুধু হাত ছানি দাও
আমি শুধু উড়ে উড়ে
পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাই
ঞ.
এই যাও এই আসো বুঝিনা ভালবাসো
নাকি হাসো হাসি উপেক্ষার
ট.
তুই দূরে যাস, অপার আকাশ
মৌমাছি তোর বোন
তোর জন্যে মেঘ, কষ্ট দুপুর
মোচড়ে ওঠে মন
ঠ.
রোদ ঝলমলে দিন, এমন মাতাল হাওয়া
তার চেয়ে ভীষণ ছিল তোমায় ফিরে পাওয়া
ড.
ভালো থেকো,
ভালো থাকার সবগুলো উপকরণ সাথে রেখো, ভালো থেকো
আমার তো বেশ কাটছে সময় তোমায় ভেবে
সৃতিগুলো নেড়েচেড়ে, ইজিচেয়ার একলা ছাদে বারান্দাতে
নিজের প্রতি যত্ন নিও, সময়ে আর অসময়ে একটু ভেবো
দুরে কোথাও একটা মানুষ তোমার প্রহর গুনে গুনে পরিশ্রান্ত
ভালো থেকো
ঢ.
কিছু রোদ ও রোদ্দুর
ছিল খুব প্রয়োজন
অথচ তুমি দূরে ছিলে
ণ.
ইচ্ছে হলেই ছুঁয়ে আসি তোমার ভেতর
তোমায় ছুঁতে পারিনা
ত.
ভালবেসে আমি তোমাকে বৃষ্টিভেজা কাঠগোলাপ দিলাম
তুমি নাহয় কাঠফাটা রোদ্দুর দিও

তুমি মুখ তুলে চাওনি বলে

তুমি মুখ তুলে চাওনি বলে
--- মহাদেব সাহা

তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই দেখো আমি
সব কাজে মনোযোগহীন
সবখানে খাপছাড়া ;
তাই বহুদিন কবিতাও পড়ে আছে অসম্পূর্ণ
একটি পঙক্তি মেলানো হয়নি আর
তুমি ফিরে তাকাওনি বলে,
কতো প্রগাঢ় ইমেজ ঝরে গেছে তোমার
সামান্যতম স্নেহের অভাবে ।

তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে
কিভাবে যে ক্ষয়ে গেছি অন্তরে-বাহিরে
কিভাবে যে হয়ে গেছি নিঃস্ব, রিক্ত, উদ্দামহীন
শুধু তোমার উপেক্ষা পেয়ে উৎসাহে পরেছে ভাটা,
পরাজয় মেনেছি এভাবে
সব প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে নিজেই
নিয়েছি তুলে লজ্জার মুখোশ ।

ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে গেছি সকলের
অজ্ঞাতসারেই,
কাউকে বলিনি কিছু, বুঝতে দেইনি এই গোপন
ব্যর্থতা
শুধু আমি জানি তোমার করুনাধারা ছাড়া
এ জীবনে ফুটবে না মুগ্ধ কিশলয়
মাথায় উঠবে না কোনো জয়ের শিরোপা,
আমার গলায় কেউ পরাবে না গৌরবের মালা ;
তোমার সযত্ন পরিচর্যা ব্যতিরেকে
বলো নিরাময় হয়েছে কখন কার ক্ষত?

তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে রৌদ্রদগ্ধ হয়ে গেছে
হৃদয়ের ঘন বনাঞ্চল
বর্ষণ-অভাবে সেখানে দিয়েছে দেখা ব্যধি ও মড়ক,
একমাত্র তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে
এই গ্লানি এই পরাজয় ।
দিনরাত্রি হয়ে গেছে উসকো-খুসকো,
এলোমেলো, সঙ্গতিবিহীন
কিছুই মেলে না আর
সবখানে থেকে যায় একটা না একটা ছেঁড়া তার ;
তাই আমাকে বেড়াতে হয় দেশে দেশে
কান্না ছাড়া আর কোন ঠিকানাও নেই ।

শুধু তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে রয়ে গেছি
সবার পশ্চাতে
কোথাও পাইনি ঠাই,
সকলের কাছে উপেক্ষিত;
এমনকি যতটা হেঁটেছি পথ,
বিপদের মুখে ভেঙ্গেছি চড়াই
সে কথাও কেউ কখনো বোঝেনি ।

একমাত্র তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই
ভিতরে-বাহিরে এই অপার ব্যর্থতা
শুধু তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই
মরুভূমি গ্রাস করে এখন আমাকে।

#pc:collection

Monday, January 23, 2017

সেসব কিছু আর মনে নেই

সেসব কিছুই আর মনে নেই
—- মহাদেব সাহা

আমার কাছে কেউ কেউ জানতে চায়
পৃথিবীর কোন নারীকে আমি প্রথম ভালোবাসি,
কেউ কেউ জানতে চায় কাকে আমি প্রথম
চিঠি লিখি,
কেউ বলে, প্রথম গোপনে কোন
নামটি আমি লিখে রেখেছিলাম;
প্রথম আমি কী দেখে মুগ্ধ হই, প্রথম কার
হাত ধরি
আমার প্রথম স্মৃতির এই সব
প্রশ্নে আমি ঠিক কিছুই
বলতে পারি না, বোকার
মতো চেয়ে থাকি।

প্রথম অশ্রুবিন্দুর কথা কার মনে থাকে,
তারপর এতো বৃষ্টি এতো বর্ষা
মাটির শ্লেটে প্রথম যে অক্ষর
লিখেছিলাম আমি
তা আর কিছুতেই
কারো কাছে বলা যাবে না,
প্রথম কবে সেই রাজহাঁসটিকে বুকের
মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিলাম
সেই শিহরণ কবে বাতাসে মিশে গেছে,
পুকুরপাড়ের ঘাটলার সিঁড়িতে যে নাম
প্রথম খোদাই করেছিলাম আমি,
এতোদিনে চোখের জলে তার
কোনো চিহ্নই আর নেই
আমি সেই আদ্যক্ষর কী করে দেখাব?

আমি কী করে দেখাব প্রথম স্বপ্ন
দেখে আমি
কীভাবে সারারাত কেঁদেছিলাম,
ভালোবাসা কথাটা প্রথম
বলতে গিয়ে কত লক্ষবার
মুখ ঢেকেছি আমি,
প্রথম কবে আমি বর্ষণ দেখলাম
পৃথিবীতে
কবে প্রথম পাখির ডাক শুনলাম,
সন্ধ্যাতারা দেখলাম
না, না, সেসব কিছুই আর আমার মনে নেই
কারোরই মনে থাকে না।

কবে কে আমার হাতে লুকিয়ে
একটি গোলাপ ফুল দিয়েছিল
বইয়ের ভাঁজে রেখে দিয়েছিল
একখানা লাজুক চিঠি,
কে বলেছিল কানের কাছে কোকিলের
মতো মাতাল করা একটি শব্দ!
সেসব কিছুই আর আমার মনে নেই,
মনে নেই।

#pc:collection

ও মেয়ে

ও মেয়ে-
শতাব্দী রায়

ও মেয়ে তোর বয়স কত?

: কি জানি গো,মা থাকলে বলে দিত।
সেই যে বারে দাঙ্গা হল,
শয়ে শয়ে লোক মরল,
হিন্দুদের ঘর জ্বলল,
মুসলমানের রক্ত ঝরল,
তখন নাকি মা পোয়াতি,
দাঙ্গা আমার জন্মতিথি।

ও মেয়ে তোর বাবা কোথায়?

: মা বলেছে,গরিব দের বাবা হারায়
কেউ তো বলে বাপটা আমার হারামি ছিল।
মায়ের জীবন নষ্ট করে,অন্য গাঁয়ে ঘর বাঁধল।
মা বলত, শিবের দয়াই তোকে পেলাম,
শিবকেই তাই বাপ ডাকলাম।

ও মেয়ে তোর প্রেমিক আছে?
ছেলেরা ঘোরে ধারে-কাছে?

: প্রেমিক কি গো?মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে?
স্বপ্ন দেখাই দিন দুপুরে?
চুড়ি কাজল মেলাতে কেনায়,
ঝোপের ধারে জামা খোলায়?
এসব নন্দ কাকা করেছে দুবার
প্রেমিক ওকেই বলব এবার।

ও মেয়ে তোর পদবি কি?

: বাপই নাকি দেয় শুনেছি
পদবী থাকলে ভাত পাওয়া যায়?
বাপের আদর কাঁদায় হাসায়
ওটা কি বাজারে মেলে?
কিনব তবে দু-দশে দিলে
দামী হলে চাই না আমার
থাক তবে ও বাপ-ঠাকুরদার

ও মেয়ে তুই রূপসী?

:লোকে বলে ডাগর গতর সর্বনাশী
রুপ তো নয়, চোখের ধাঁধা।
যৌবনেতে কুকুরী রাঁধা।
পুরুষ চোখের ইশারা আসে,
সুযোগ বুঝে বুকে পাছায় হাত ও ঘষে।
রুপ কি শুধুই মাংসপেশী?
তবে তো আমি খুব রূপসী।

ও মেয়ে তোর ধর্ম কি রে?

: মেয়েমানুষের ধর্ম কি গো?
সব কিছু তো শরীর ঘিরে,
সালমা বলে ধর্মই সমাজ বানায়,
সন্ধেবেলা যখন দাঁড়াই
কেউ তো বলে না,হিন্দু নাকি?
সবাই বলে,কতই যাবি?
বিছানা নাকি ধর্ম মেলায়
শরীর যখন শরীর খেলায়
তাই ভাবছি এবার থেকে ধর্ম বলব শরীরবাদী খেলাকে।

#pc:collection

হঠাৎদেখা

হঠাৎ দেখা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা ,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন ।।

আগে ওকে বারবার দেখেছি
লাল রঙের শাড়িতে --
ডালিম-ফুলের মত রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে ।
মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে ।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা :
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে ।।

হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার ।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে :
আলাপ করলেম শুরু --
'কেমন আছো', 'কেমন চলছে সংসার ' ইত্যাদি ।
সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে ।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব ,
কোনটা বা দিলেই না ।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় --
কেন এ-সব কথা ,
এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক'রে থাকা ।।

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে ।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে ।
মনে হল কম সাহস নয় --
বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে ।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে ,
'কিছু মনে কোরো না ,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার !
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই ;
দূরে যাবে তুমি ,
তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে ,
শুনব তোমার মুখে ।
সত্য করে বলবে তো ?'
আমি বললাম ,'বলব' ।
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
'আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে --
কিছুই কি নেই বাকি?'

একটুকু রইলেম চুপ করে ;
তার পর বললেম ,
'রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে' ।

খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি ।
ও বললে, 'থাক এখন যাও ও দিকে'
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে ।
আমি চললেম একা ।।

#pc:collection

উত্তর

উত্তর
–-- শামসুর রাহমান

তুমি হে সুন্দরীতমা
নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো
‘এই আকাশ আমার’
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।

সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে
বলতেই পারো, ‘ফুল তুই আমার’
তবু ফুল থাকবে নীরব
নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।

জোৎস্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
তোমার বলার অধিকার আছে,
‘এ জোৎস্না আমার’
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।

মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’,
কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো,
‘আমি তোমার, তুমি আমার’।

#pc: collection

অনন্তকাল

হাওয়া তোমার আঁচল নিয়ে ধিঙ্গীনাচন
করলো খেলা
সকাল বিকেল সন্ধেবেলা
চোখের খিদের আশ মেটালো লস্পটে রোদ
রাস্তা ঘাটে
যখন হাঁটো সঙ্গে হাঁটে

বনের পথে হাঁটলে যখন কাঁটাগাছে
টানলে কাপড়
চ্যাংড়া ছোঁড়ার ফাজলামিকে
ভেবেছিলাম মারবে থাপড়।

একটা নদীর লক্ষটা হাত, ভাসিয়ে দিলে
সর্বশরীর
লুটপাটেতে ছিনিয়ে নিলে ওষ্ঠপুটের
হাসির জরির
জেল্লাজলুস।

কেবল আমি হাত বাড়ালেই, মাত্র আমার
পাঁচটা আঙুল,
তোমার মহাভারত কলুষ।

রক্তে মাংসে মনুষ্যজীব, সেই দোষেতেই
এমন কাঙাল।
কিন্তু তোমার খবর নিতে আমার কাছেই
আসবে ছুটে
অনন্তকাল।

পুর্নেন্দু পুত্রী
#pc: collection

পাখি হয়ে যায় প্রাণ

পাখি হয়ে যায় প্রাণ
- আবুল হাসান

অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও
ভীষণ অচেনা ও একা !
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ন হতে এই
পৃথিবীর সাথে কোনদিন।
ফাতিমা ফুফুর প্রভাতকালীন কোরানের
মর্মায়িত গানের স্মরণে তাইকেন যেনো আমি
চলে যাই আজো সেই বর্নির বাওড়ের বৈকালিক
ভ্রমণের পথে,
যেখানে নদীর ভরা কান্না শোনা যেত মাঝে মাঝে
জনপদবালাদের স্ফুরিত সিনানের অন্তলীন শব্দে
মেদুর !
মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষ্ণী চাঁদ তারা
নরম যুঁইয়ের গন্ধ মেলার মতো চোখের মাথুর ভাষা
আর হরিকীর্তনের নদীভূত বোল !
বড় ভাই আসতেন মাঝরাতে মহাকুমা শহরের যাত্রা
গান শুনে,
সাইকেল বেজে উঠতো ফেলে আসা শব্দ যখোন,
নিদ্রার নেশায় উবু হয়ে শুনতাম, যেনো শব্দে কান
পেতে রেখে; কেউ বলে যাচ্ছে যেনো,
বাবলু তোমার নীল চোখের ভিতর এক সামুদ্রিক
ঝড় কেন ?
পিঠে অই সারসের মতো কী বেঁধে রেখেছো ?
আসতেন পাখি শিকারের সূক্ষ্ণ চোখ নিয়ে দুলাভাই !
ছোটবোন ঘরে বসে কেন যেনো তখন কেমন
পানের পাতার মতো নমনীয় হতো ক্রমে ক্রমে।
আর অন্ধ লোকটারও সন্ধ্যায়,
পাখিহীন দৃশ্য চোখে ভরে !
দীঘিতে ভাসতো ঘনমেঘ, জল নিতে এসে
মেঘ হয়ে যেতো লীলা বৌদি সেই গোধূলি বেলায়,
পাতা ঝরবার মতো শব্দ হতো জলে ভাবতুম
এমন দিনে কি ওরে বলা যায় - ?
স্মরণপ্রদেশ থেকে এক একটি নিবাস উঠে গেছে
সরজু দিদিরা ঐ বাংলায়, বড়ভাই নিরুদ্দিষ্ট,
সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি সাথে কোরে নিয়ে গেছে
গাঁয়ের হালট !
একে একে নদীর ধারার মত তারা বহুদূর গত !
বদলপ্রয়াসী এই জীবনের জোয়ার কেবল
অন্তঃশীল একটি দ্বীপের মতো
সবার গোচরহীন আছি অজো সুদূর সন্ধানী !
দূরে বসে প্রবাহের অন্তর্গত আমি,
তাই নিজেরই অচেনা নিজে
কেবল দিব্যতাদুষ্ট শোণিতের ভরা তারা
স্বপ্ন বোঝাই মাঠে দেখি,
সেখানেও বসে আছে বৃক্ষের মতোন
একা একজন লোক,
যাকে ঘিরে বিশজন দেবদূত গাইছে কেবলি
শতজীবনের শত কুহেলী ও কুয়াশার গান।
পাখি হয়ে যায় এ প্রাণ
ঐ কুহেলী মাঠের প্রান্তরে হে দেবদূত !


আমি একদিন নিখোঁজ হবো

আমি একদিন নিখোঁজ হবো...

আমি একদিন সন্ধ্যা হব
অন্ধকারে হারিয়ে ফেলে খুঁজবে যখন
বটের ধারে ধানসিঁড়িদের কান্না হবো।
মাঝির হঠাৎ অবাক ভুলে বৈঠা হারা নায়ের মতন
আমিও অমন ভেসেই যাবো।
পদ্মপাতায় জলের মতন
শিমুল তুলোর মনের মতন
আমিও সেদিন উবেই যাবো।

আমি একদিন পাখি হবো
একলা আকাশ একলা ডানায় চুপটি করে পারি দেব
সঙ্গে নেব গোপন কথা
ছোট্ট বুকের বিশাল ব্যাথা
ডানায় ডানায় মেঘের ভেতর সেসব কিছু ছড়িয়ে দেব

আমি একদিন কান্না হবো
নীল আকাশের কষ্ট ছুঁয়ে সমুদ্দুরে বৃষ্টি হবো।
হারিয়ে যাওয়া সেইতো ভালো।
যেমন ছিলাম রোজ থেকেও
তেমন করেই হারিয়ে যাবো।

আমি একদিন নিখোঁজ হবো...

----------------------------------
আমি একদিন নিখোঁজ হবো.../ সাদাত হোসাইন